জোনাকি/Firefly Insects


জোনাকি


নাম: অপর্ণা দাস
তারিখ: ২২.১.২০১৯

কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কালিতলা থেকে অটোর পিছনে মাঝের সিটে বসেও আজ কেমন যেন বেশ শীত শীত করছে। এই রে শরীর ঠিক আছে তো? কপালে হাত ঠেকিয়ে দেখলাম, না সে রকম তো কিছু মনে হচ্ছে না. কি যা তা  সব ভাবছি। সবে দু'দিন হলো পুজোর ছুটি  কাটলো, ১৪ দিনের ছুটিতে জাস্ট হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। আর কোনও আলসেমি না এবার কাজে মন দিতে হবে। পুজোর ছুটির একদিন আগেই তো প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিকে  সিলেবাস রেডি করে রাখতে বলেছেন, আজ যত রাতই হোক সিলেবাসটা একটু এডিট করে কাল ফার্স্ট হাফে স্যারকে মেইল করে দেবো। হঠাৎ অটোওয়ালা ব্রেক কষে বললো, আজ মামার বাড়ি যাবেন নাকি? অটো স্ট্যান্ড যে পাড়ায় সেখানেই আমার  দাদু-দিদার বাড়ি আর অটোওয়ালা আমার পূর্ব পরিচিত।  অটোওয়ালার প্রশ্নে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেও প্রত্যুত্তরে বললাম, না না দিদাকে দেখতে  পুজোতেই একদিন গেছিলাম। কথা শেষ হতে না হতেই দেখলাম আমার গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। পাড়ার মোড়ে অটো থেকে নেমেই একবার মোবাইলে চোখ রাখলাম। ৬টা পাঁচ। বাঁ-দিকে শনি মন্দিরে তাকিয়ে প্রণাম করে হাটতে শুরু করলাম। অটো থেকে নেমে আমার বাড়ি অবধি যেতে সাত থেকে নয় মিনিট হাঁটতে হয়। চারপাশে তখন অন্ধকার নেমে এসেছে। রাস্তার দুই ধারে বেশ কতকগুলো কলার বাগান  আর নাম না জানা জংলী ঘাসে ভরা খালি জমি ধূধূ করছে। চোখের সামনে তখন অজস্র জোনাকিরা আপন মনে ডানা মেলে খেলা করছে আর কানে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির পোকা মাকড়ের ডাক। উফঃ এই এটুকু পথ আমার স্বপ্নের মতো মনে হয়। এর মধ্যে একটি জোনাকি উড়তে উড়তে ঠিক আমার পায়ের কাছে এসে পড়লো।  ইস এক্ষুনি এর ওপর দিয়ে গাড়ি চলে যেত। জোনাকির সামনে হাত পাততেই ও আমার আঙুল বেয়ে হাতের তালুতে উঠে গেলো আর আপন মনে খেলা করতে শুরু করে দিল, ঠিক যেমন ছোট্ট শিশু তার সামনে মায়ের বাহু প্রসারণ দেখে আনন্দে ডগমগ হয়ে কোলে উঠে খেলতে শুরু করে। মোড় থেকে ১০০ মিটার রাস্তাজুড়ে গাছ-গাছালি আর ছোট বড় পুকুরের আঁকিবুকি। রোজ বাড়ি ফেরার পথে এটুকু রাস্তা এখনও আমার শৈশবটা বাঁচিয়ে রেখেছে। জোনাকিরা শৈশবে আমার রোজকার সন্ধ্যাবেলার বন্ধু। খুব মনে পরে সন্ধ্যাবেলায় খেলতে খেলতে যখনই কোনও জোনাকি হাত দিয়ে ধরেছি তো ওমনি বাড়ির বড়রা বিশেষত ঠাম্মা, পিসি আর  মা সব্বাই একযোগে বলতো ওকে ছাড় ছাড় নাহলে আজ রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তোকে সঙ্গ দিতে হবে । কুসংস্কার হোক তাও সে সব ভারি মজার দিন ছিল। এর মধ্যেই কানে এলো পোকামাকড়ের কলতান।  খুব মন দিয়ে শুনলে মনে হয় রাতের অন্ধকারে এই পোকামাকড়গুলোও নির্দিষ্ট  সুর, লয়ে শব্দ করে। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সম্বিৎ ফিরল ,ওঃ বাড়ি পৌঁছে গেছি। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সিলেবাসটা এডিট করতে করতে প্রায় দুটো বেজে গেল। আজ বেশ শীত করছে,  রাতে ঘুমোনোর আগে ফ্যানের সুইচ অফ করে দিলাম। ঘড়িতে তখন পৌনে তিনটে বাজে। উফঃ কেন যে আজ ঘুম আসছে না। অনেক চেষ্টা করেও দু'চোখের পাতা এক করতে পারছি না। চোখের সামনে ভেসে উঠলো জোনাকিরা ঘরের এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে  আর আমি ওদের মিটমিট করে দেখছি। ইস কদিন আগে কি বোকামিটাই না করছিলাম। মোড় থেকে অন্ধকার পথের ইলেকট্রিক পোস্টগুলোতে বাতিস্তম্ভ  লাগানোর জন্য আমিই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিলাম।  ক্লাবের দাদারা বেশ কতকগুলো লাইট লাগিয়েওছিলো।  মাস তিনেক পর আবার যে কি সেই অন্ধকার। যাইহোক এখন এই অন্ধকার পথ আমার বেশ ভালোই লাগছে। অন্ধকারে ফিরে পেয়েছি আমার শৈশব, চোখের সামনে মেলে ধরেছে অজস্র স্বপ্নের ডালি। 


Comments

Popular posts from this blog

Dreams unlimited

Real relative , who helps in a bad time

Love everyone, everything