প্রেম ফতোয়া


প্রেম ফতোয়া
নাম: অপর্ণা দাস
তারিখ : ২২..২০১৮
 উফ! আজ বেশ শীত পড়েছে । এই রণিতা তাড়াতাড়ি পা চালা এই উইক ক্লাস মনিটর কে জানিস তো? দু'জনে এক সঙ্গে গলা মিলিয়ে, আমাদের স্কুলের গব্ব হৃত্বিক চ্যাটার্জীএই রোমি সামনে দেখ অনেকদিন বাঁচবে বল! কেমন ড্যাবড্যাব করে এদিকে দেখছে আমরা যেন এই প্রথম স্কুলে আসছি ওরে রণিতা তাড়াতাড়ি চল নইলে কালকের মত আবার লেট আচ্ছা রণিতা তোর তো একটা সাইকেল রয়েছে তুই ওটা আনতে পারিস না তাহলে আর এত কষ্ট করতে হয় না রোমি  মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ! ১৪ বছরেই বুড়িয়ে গেছিস বল ? এর মধ্যে পাশ দিয়ে হুস করে একটি সাইকেল বেরিয়ে গেলো এই এই এই রোমি এই এই কি ? দেখলি কে গেলো ? হুম দেখলাম! কি দেখলি বল না ? রণিতা বেশি পাকামি করিস না আজ ম্যাথস টিচারের হোম ওয়ার্ক করেছিস কি? এই যা কি হবে ! কাঁদো কাঁদো গলায় রণিতা বললো, না আজ কত যে বকা খাবো তার কোনো ইয়ত্তা নেই শোন আজ আমরা আলাদা আলাদা বেঞ্চ বসবো
বলে দিলাম তোর জন্য এবার বোধ হয় ফিফ্থ র্্যঙ্ক থেকে সোজা ক্লাসের বাইরে চলে যাবো আর শোন ক্লাসে ঢোকার পর ব্যাপারে একটাও কথা না আর যদি বলি কি হবে হুমম? যদি বলিস তাহলে রণিতা তুই যে গত সপ্তাহেও ম্যাথস ক্লাসে ওঠবোস করেছিস গড়গড় করে সব বলে দেব কাকিমনির কাছে অমনি রণিতা বাঁ চোখের ভ্রু তুলে বললো, ইস তুই না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড? এর মধ্যে দু'জন গেটের সামনে এসে পৌঁছলো মাথা নিচু করে প্রেয়ার লাইন গিয়ে দাঁড়ালো প্রার্থনা শেষে গুটিগুটি পায়ে ক্লাসে ঢুকবে এমন সময় মুখোমুখি স্কুলের পি হিন্দোল ঘোষের সঙ্গে এই যে দুই প্রানের সখি এত ফুসুরফুসুর কি হচ্ছিল? তৎক্ষণাৎ রোমির দিক থেকে উত্তর এলো, স্যার আমরা তো হোম ওয়ার্ক নিয়েই কথা বলছিলাম হুম ! ক্লাসে যাও এই মধুরিমা একটু শোননা কি বল? কিরে মুখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলে হবে আগের দিন শুধু ডাকলি কিচ্ছুটি বললি না না মানে তোর এই হ্যান্ড ওয়াচটা খুব সুন্দর কে দিয়েছে? বাবা বাবা বলেছিল ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারলে ঘড়ি গিফট করবে বাবার কথা মতো আমি সেই শর্ত পূরণ করেছি, তাই আর কি  আচ্ছা গত সপ্তাহে তাহলে কেন ডাকছিলি? তখন তো আমার ঘড়ি ছিল না রোমি মাথা নেড়ে বললো, ওহ ! তাহলে এমনিই ডেকেছিলাম হ্যাপি ? মধুরিমা বেশ বিরক্ত মুখে ওর জায়গায় গিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো এর মিনিট দুয়েকের মধ্যে বেঙ্গলি লিটারেচারের ক্লাস শুরু হয়ে গেল কল্পনা ম্যাডাম চক্ নিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে খসখস করে লিখছেন, হ্যাপি ভ্যালেনটাইন' ডে স্টুডেন্টস সঙ্গে সঙ্গে ম্যাডমকেও পাল্টা শুভেচ্ছা বার্তা দিল ক্লাসে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীর অমনি কল্পনা ম্যাডাম উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, স্টুডেন্টস হোয়াই ডু উই সেলিব্রেট ভ্যালেনটাইন' ডে? এরপর হাত তুলে এক একজন একেক ভাবে ম্যাডামের প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করলো হঠাৎ রণিতা হাত ঝাঁকিয়ে বললো, রোমি ওদিকে ফ্যালফ্যাল করে দেখছিসটা কি? কোনো উত্তর এলো না , নিরুত্তর রোমি আবার হাত ঝাঁকাতে যাবে এমন সময় রোমি অস্পষ্ট স্বরে বললো, জানিসই তো সবরণিতা বেশ নেকুপুসু স্বরে বললো, শুধু দেখলে হবে? সহসা রোমির মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতার লাইন,
বার বার, সখি, বারণ করনু যাও মথুরাধাম
বিসরি প্রেমদুখ রাজভোগ যথি করত হমারই শ্যাম
ধিক্তুঁহু দাম্ভিক, ধিক্রসনা ধিক্‌, লইলি কাহারই নাম
বোল সজনি, মথুরা-অধিপতি সো কি হমারই শ্যাম
রণিতা রোমির পিঠ চাপড়ে বললো, রবি ঠাকুরের এই কবিতার লাইনগুলো তোর সব মনে আছে? আমি না দিন দিন কেমন গুবলেট হয়ে যাচ্ছি রোমান এটাই লিখে আজ ওকে পাঠিয়ে দে। রোমি বেশ উত্তেজিত গলায় বললো, গত মাসে তোর দিদি তোকে যে ডায়েরিটা গিফট করেছিল ওর থেকে একটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে দিবি প্লিজ !  রণিতা বলেও ফেসে গিয়েছে পালানোর আর কোনো পথ নেই যে ভাবলেশহীন মুখে বললো, দাড়া দেখছি ডায়েরিটা আদৌ এনেছি কিনা  অত্যন্ত যত্নসহকারে ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা ব্যাগ থেকে বের করতে করতে বললো, এই শোন একটাই পেজ ছিড়বি কিন্তু রোমি রীতিমতো ঝাপিয়ে পরে ডায়েরির একটা পেজ ছিড়ে নিল এরপর কি যেন খসখস করে লিখে কাগজটা বেশ ভালো করে ভাঁজ করে রণিতার হাতে ধরিয়ে বলল, টিফিন আওয়ার্সে শ্যামের হাতে এটা দিবি (উল্লেখ্য, সম্পর্কে মধুরিমা শ্যামের খুড়তুতো বোন) এমন সময় কল্পনা ম্যাডামের চোখ গেলো রণিতার দিকে রণিতা স্ট্যান্ড আপরণিতার তো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, খেয়েছে রে এবার কি বলি ম্যাডামকে ম্যাডাম রণিতাকে জিজ্ঞেস করলো, আর ইউ সো আনকম্ফোর্টেবল ইন দি ক্লাস? এর মধ্যে টিফিন আওয়ার্সের ঘন্টা ঢংঢং করে বাজলো ম্যাডাম হাত ঘড়িটা চোখ বোলাতে বোলাতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো এদিকে রণিতাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো উফফ খুব বাঁচা বেঁচে গেছি আজ এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চিঠিটা যথাস্থানে গিয়ে পৌঁছলো শ্যাম মন দিয়ে চিঠিটা পড়ছে এমন সময় ক্লাস মনিটর এসে শ্যামের সামনে মুলোর মতো দাঁতগুলো বের করে বললো, শ্যাম টিফিনের সময় খাবি, খেলাধুলো করবি, তা না করে এসব কি করছিস দেখি তোর হাতে ওটা কি? চিঠিটা লুকোতে যাবে এমন সময় মনিটর শ্যামের হাত থেকে চিঠিটা খপাৎ করে কেড়ে নিয়ে বললো, দাড়া এটা আমি স্যারের কাছে দেব তখন বুঝবে  ক্লাস মনিটরের কথা না শোনার ফল এমন সময় ক্লাসের সামনে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছিলেন হিন্দোল ঘোষ মহাশয় মনিটর তো হিন্দোলবাবুকে দেখেই বললো, ওই তো স্যার স্যার? উত্তরে হিন্দোল ঘোষ বললেন, কিছু বলবে? মনিটর বললো, স্যার এই চিঠিটা। চিঠিটা না খুলেই গুরু গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো, কে দিয়েছে? মনিটর অমনি হাত দেখিয়ে বললো, স্যার শ্যাম শুনেই তো হিন্দোলবাবু প্রচণ্ড খেপে গেলেনচিৎকার করে বললেন, ক্লাসে কি কোনো মেয়ে ছিল না পিওনবাবুর রাগ দেখে মনিটর তো ভয়ে ঢোক গিলতে গিলতে বললো, না মানে স্যার আমিও দেখিনি খুলে চিঠিটা কে কাকে দিয়েছে পিওনবাবু চিঠিটা খুলেই দেখলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতার লাইন এবার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো শ্যামের ওপর চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞেস  করলো, এই শ্যাম বল চিঠিটা তোকে কে দিয়েছে? শ্যাম তো ঘেমেনেয়ে একসার কি বলবে কিছুই ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছে না এমন সময় মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো শ্যাম বললো, স্যার ওটা আমায় দিন আমি ভালো করে দেখে বলছি কে দিয়েছেপিওনবাবু যেই না চিঠিটা শ্যামের হাতে দিয়েছে অমনি শ্যাম চিঠিটা গপ করে গালে পুরে নিলো এই এই তুমি ওটা কি করলে দাড়াও দেখাচ্ছি মজা শ্যাম কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো, স্যার সেই কখন টিফিন হয়েছে খুউউউউব খিদে লেগেছিলো তাই বলে তুমি চিঠিটা খেয়ে ফেললে  এই বলে পিওনবাবু তো রাগে গড গড করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলো।এদিকে  কয়েক মিনিটের টানটান মুহূর্ত চাক্ষুস করার পর রোমি আর রণিতা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো রণিতা বললো, রোমি তুই আজ খুব বাঁচা বেঁচে গেছিসহিহি করে হাসতে হাসতে রোমি বললো, বল শ্যাম আমায় বাঁচিয়ে দিয়েছে          



















Comments

Popular posts from this blog

Dreams unlimited

Real relative , who helps in a bad time

Love everyone, everything